logo
ads

 যুক্তরাষ্ট্রে শিপিং বিশৃঙ্খলা, ইউপিএস–এর ভুলে হারানোর পথে বিয়ের পোশাক ও প্রিয় স্মৃতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫০ এ.এম
 যুক্তরাষ্ট্রে শিপিং বিশৃঙ্খলা, ইউপিএস–এর ভুলে হারানোর পথে বিয়ের পোশাক ও প্রিয় স্মৃতি

সংগৃহীত ছবি

মার্কিন শুল্ক নীতির হঠাৎ পরিবর্তনে দেশজুড়ে শিপিং বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক—কেউ অপেক্ষা করছেন প্রিয় জিনিসের জন্য, কেউ আবার আশঙ্কা করছেন, তাঁর মালপত্র হয়তো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

মিশিগানপ্রবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী জানানি মোহন তাঁদেরই একজন। তাঁর বিয়ের পোশাক—একটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, যা একসময় তাঁর মা এবং দাদীরও পরিধান করা ছিল—এখন নিখোঁজ। UPS-এর তথ্যমতে, প্যাকেজটি “নষ্ট করার” তালিকায় রয়েছে। 

ঘটনার সূত্রপাত আগস্টের শেষে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়—৮০০ ডলারের কম মূল্যের কোনো আন্তর্জাতিক পার্সেল আর “স্বয়ংক্রিয় ছাড়” পাবে না; বরং প্রতিটি চালানকে শুল্ক ও কাগজপত্রসহ পূর্ণ পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিদিন গড়ে ৪০ লাখ পার্সেল নতুন নিয়মে প্রক্রিয়াজাত করতে হচ্ছে, যা UPS, FedExসহ বড় বড় কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। UPS-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আমরা এখনও ৯০% আন্তর্জাতিক চালান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাড় করতে পারছি, তবে অনেক পার্সেল কাগজপত্রের ঘাটতিতে আটকে আছে।”

তবে অন্তত সাতজন গ্রাহক বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাঁদের পার্সেল ধ্বংসের আগে UPS কোনোভাবে যোগাযোগ করেনি—শুধু ট্র্যাকিং পেজেই দেখেছেন “to be disposed” লেখা সতর্কতা।

আরেক ভুক্তভোগী, নিকোল লোবো, যুক্তরাজ্য থেকে আগস্টে ফিলাডেলফিয়ায় ফিরে এসে নিজের দশটি বাক্স পাঠান UPS-এর মাধ্যমে। ছয় সপ্তাহ কেটে গেলেও সেগুলো এখনও আসেনি।
গত মাসে UPS তাঁকে জানায়—তাঁর চালান ধ্বংস করা হবে। নিকোল বলেন, “এটা দুঃস্বপ্নের মতো। আমি সব তথ্য পাঠিয়েছি, ফোন করেছি, মেইল করেছি—তবু কোনো সাড়া নেই।”

বিবিসির অনুসন্ধানের পর UPS আবার তাঁকে যোগাযোগ করে জানায়, পার্সেল “পথে আছে”—যা সাময়িক আশার সঞ্চার করেছে। একইভাবে জানানি মোহনের ক্ষেত্রেও সম্প্রতি কোম্পানি অতিরিক্ত কাগজপত্র চেয়েছে এবং জানানো হয়েছে, তাঁর প্যাকেজটি সম্ভবত কাস্টমস ছাড় পেয়েছে।

ওরিগনের Mizuba Tea Co জানিয়েছে, তাদের জাপান থেকে পাঠানো পাঁচটি চালান—মোট মূল্য ১ লাখ ডলারের বেশি—কাস্টমসে আটকে আছে।
কোম্পানির প্রধান লরেন পার্ভিস বলেন, “আমাদের পুরো টিম এখন UPS স্ক্যান আপডেটের অপেক্ষায় থাকে—প্রতিদিন যেন একটা যুদ্ধ।”

একইভাবে সুইডিশ ক্যান্ডি ল্যান্ড নামে একটি কোম্পানি জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাঠানো ৭০০টি প্যাকেজ আটকে আছে বা ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে তাদের ক্ষতি হয়েছে ৫০ হাজার ডলার।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা টোবিয়াস জোহানসন বলেন, “এটা আমাদের জন্য ভয়াবহ আঘাত। এখনো কোনো সঠিক জবাব পাইনি।”

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি কেবল ছোট ব্যবসা নয়, পুরো আমদানি–রপ্তানি শৃঙ্খলকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।
ফ্লেক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট বার্নি হার্ট বলেন, “কেউই প্রস্তুত ছিল না। আমদানিকারকদের এখন অতিরিক্ত কাগজপত্র, ট্যাক্স ও দেশ–উৎপত্তি সংক্রান্ত তথ্য দিতে হচ্ছে—যা অনেক সময় পাওয়া অসম্ভব।”

ন্যাশনাল ফরেন ট্রেড কাউন্সিলের কর্মকর্তা জন পিকেল বলেন, “অনেকে ভেবেছিল দ্রুত সমাধান হবে, কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।”

যদিও UPS জানিয়েছে, তারা প্রতিটি গ্রাহকের সঙ্গে তিনবার যোগাযোগের চেষ্টা করে, জানানি ও নিকোলের মতো অনেকেই বলছেন, তাঁরা কোনো বার্তা পাননি।
এখনও তাঁদের আশা—প্রিয় পোশাক ও স্মৃতিগুলো কোনোভাবে ফিরে পাবেন।
“আমি শুধু চাই, আমার মায়ের শাড়িটা আবার হাতে নিতে পারি,” বলেন জানানি মোহন, “ওটাই আমার বিয়ের, আমার পরিবারের গল্পের প্রতীক।”

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, বর্তমানবাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ